যেভাবে সন্তান হত্যা থেকে ফিরে আসে এক পিতা
![]() |
| নূর- মনি |
যেভাবে হত্যার প্রস্তুতি নেইঃ-
হত্যা করার জন্য ভাড়াটিয়া খুনি খুঁজাখুঁজি শুরু করি। দেশ লকডাউন। তাই খুনি পেতে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
দুইদিন পর এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে একজন খুনি খুজে পাই।
এবার সন্তানকে তার কাছে নিয়ে যাবার পালা। আমার স্ত্রীকে বললাম সকাল সকাল রান্না শেষ করো। ওকে নিয়ে যেতে হবে, খুনি অপেক্ষা করতেছে। ওর মা রান্না শেষ করে বলল কোলের মেয়েটাকে নেওয়া যাবেনা তাকে ঘুম পাড়িয়ে বাসায় রেখে যাব।
#এবার সন্তান নিয়ে খুনির কাছে যাবার পালাঃ- যাওয়ার আগে কোলের সন্তান নূর-মনিকে বাসায় ঘুমপাড়িয়ে যাবে তার মা। মেয়েকে খাটে নিয়ে আসছে ঘুমপাড়ানো জন্য। আর আমি ঠিক তখনি নূর-মনির গলাটিপে ধরলাম মেরেফেলার জন্য।
যখন ওর গলাটিপে ধরলাম তখন ওর মা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলল আপনি কি তাকেও মেরেফেলবেন?
বললাম হে সন্তান যখন মারতে হবে তখন একটি কেন দুটিই মেরেফেলি । আমার কাছে দুটি খুনের টাকা নাই। আমি খুনিকে একটি খুনের টাকা দিতে পারব। তাছাড়া ঐ সন্তানকে মারার হাতিয়ার আমার কাছে নাই। তাই ওটা পেশাদারী খুনি দিয়ে খুন করতে হবে।
আর এটাকে হত্যা করব নীজ হাতে- কথাটা বলে নূর- মনির গলাচিপে ধরেছি সে আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসঁছে। মনে হচ্ছিল ওর কুতুকুতু লাগছে। আমি ওর গলার নীচে হাত দিলে এমনিতেই হাসে। আর বলে বাবা কাতুকুতু। ওর নিষ্পাপ নির্মল হাসি দেখে আমার চোখে পানি এসে গেল।
অবুঝ মেয়ে বুঝতে পারছেনা তার বাবা আজ তাকে আদর করে কাতুকুতু দিচ্ছেনা, খুনি হয়ে ধরেছে। ওর হাঁসির কাছে আমি হেরে গেলাম। আমি পারিনি ওর গলার মাংশপেশিতে শক্ত করে চেপে ধরতে। আমার হাত কেঁপে উঠল। আমি ভাবলাম এই সন্তানকে যদি মারতে না পারি তাহলে মাতৃগর্ভে থাকা একটা অসহায় ভ্রণকে আমি কি করে খুন করি। ঐ অনাগত সন্তান হয়ত আমার এমন সব নিষ্ঠুর নির্দয় আচরণ দেখতেছে।
যে একজন বাবা হয়ে সন্তান মারার জন্য কত কিছু করতেছি। এই অসচেতনার জন্য তার মাকে মন্দ বলা , আল্ট্রা করে ওর দিন তারিখ নিশ্চিত হওয়া। তারপর হত্যার প্রক্রিয়ায় সমূহ নিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া । সব কিছু যখন ঠিকঠাক তখন শুধু তাকে হত্যার জন্য ক্ষণগননা।
এমন সববিষয় যখন আমার মস্তিষ্কের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল ঠিক তখনই শুনতে পেলাম বাবা আমায় তুমি মেরনা। আমি দুনিয়ায় আসলে সন্তান হিসাবে ভরনপোষণ দিতে তোমার কষ্ট হলে তুমি আমায় কোন এতিমখানা বা নির্জন স্হানে ফেলে দিও। তবুও আমাকে মারতে নিয়ে যেওনা । তুমি নিলে ঐ খুনিরা আমার শরীরটাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলবে। আর আমার মা তোমাকে মুখ খোলে কিছু বলতে পারছেনা তারও খুব কষ্ট হবে। আমি সুস্থভাবে দুনিয়ায় আসলে মায়ের যেই কষ্ট হতো আজও তার এমন কষ্ট হবে। আমার মা' আমার জন্য নীরবে কাঁদবে যে কান্নার শব্দ তুমি কখনো শুনতে পাবেনা। আর এই হত্যার জন্য যেদিন তুমি সৃষ্টি কর্তার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে। সেদিন আমি খুব কষ্ট পাব। তোমার জন্য আমার মায়া হবে । কিন্তু মহানবিচারকের সামনে আমি হবো অসহায় । কথাগুলো শুনে আমি আরো শিথিল হয়ে গেলাম।
তখন আমি স্ত্রীকে বললাম আচ্ছা তোমার কি ইচ্ছে একবারও জানালেনা। তখন ও মাথা নীচু করে বলল আপনি যা ভালো মনে করেন তাই। আমি জানি ও আমার মনের অবস্থাটা জানে। আমি যা সিদ্ধান্ত নেই তা বাস্তবায়নে পিছুহটিনা। এইবার সিদ্ধান্ত থেকে পিছুহটলাম। ওকে বললাম নাও রেখে দাও। আমি যখন কোলের শিশু নূর- মনিকে হত্যা করতে পারিনি তখন আমাদের অনাগত সন্তানকেও হত্যা করতে পারবনা।
এই কথা শোনে ও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
আসলে এই সন্তান আমাদের দুজনের বেখেয়ালি আচরণে চলে আসছে। আমাদের আর সন্তান নেওয়ার কোন ইচ্ছে ছিলনা। যে কারনে তাকে হত্যার জন্য আমি দুইদিন যাবতৎ প্লান পরিকল্পনা করি। আর আমার এই পরিকল্পনায় নীরব সমর্থক ছিল তার 'মা'। ওর 'মা' সন্তান হত্যার পরিকল্পনার বিষয় সব জানত। কিন্তু আমি তার স্বামী হিসাবে আমার প্রতি তার আনুগত্য, ভয় আর নতুবা আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্হাকে বিবেচনা করে সে ছিল নীরব। মাতৃত্ব ছেঁড়া ধন। একজন মা কতটা অসহায় হলে একটি সন্তান হত্যায় তার সমর্থন থাকতে পারে তা একমাত্র ঐ ভোক্তভূগী মা-ই জানেন।
# এটি কোন গল্প নয় আজ ২২ এপ্রিল আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব ঘটনা বললাম। খুনের শেষ প্রান্ত থেকে ফিরে এলাম। একজন সীমিত আয়ের মানুষ হিসাবে আমার মত অনেক পিতার-ই এমন জীবন গল্প থাকতে পারে। যারা হয়ত আর্থিক অভাব অনাটনের কারন নীজ সন্তানকে হত্যা করেছে বা করবার পরিকল্পনা করছেন।
তাদের জন্য আমার কথা -পৃথিবী যতদিন থাকবে সমস্যাও থাকবে। তাই বলে হত্যা কোন সমাধান নয়। হত্যা করা মহাপাপ। কবির ভাষায়-মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। আধাঁর একদিন কেটে যাবে, সুন্দর আলো ফুটবে।
সময় খুব কম যত পারেন ভালো কাজ করেন, ভালো চিন্তা করেন। আল্লাহ সকলকে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি দান করুক।
ধন্যবাদ ঐ বড় ভাইকে! যে বড় ভাইয়ের সহযোগীতায় একজন সিস্টার বের করছিলাম। তিনি আমায় অনেক নিরুৎসাহিত করেছেন এবং বলেছিলেন ওটা হত্যা করোনা রেখে দাও আল্লাহ কাকে কি হিসেবে কবুল করেন কেউ জানেনা।
ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

No comments